নেশার ঘোরে করা ভুল-৩

(Neshar Ghore Kora Vul - 3)

Porikonna 2018-12-14 Comments

This story is part of a series:

চিৎকার টা আর কেউ নয় বাপিই করেছে,সারা রাত কান্নার জন্যে চোখ ফুলে ব্যাথা হয়ে আছে তাই চোখ মেলে তাকাতে চাইছি কিন্তু পারছিনা, শেষে অনেক চেষ্টা করে চোখ মেললাম আর দেখি বাপি আমার দিকে তাকিয়ে কাদছে. আমি উঠে বসার চেষ্টা করি কিছুটা উঠেই আবার পড়ে যাই কারণ আমার কোমর এর নিচের দিকটাও ব্যাথা হয়ে আছে. আমার পড়ে যাওয়া দেখে বাপি আরও জোরে হাওমাও করে কেঁদে উঠে আর বলতে থাকে “এটা আমি কি করলাম, এই পাপ করার আগে ঈশ্বর আমায় মৃত্যু দিলো না কেনো. ঈশ্বর আমায় মৃত্যু দাও আমি বাচঁতে চাইনা আমায় মৃত্যু দাও মৃত্যু দাও”

বাপির কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো,,,কারণ আমি জানি উনার কোন দোষ নেই যা করেছেন জেনেশুনে করেননি, নেশার ঘোরে করেছেন. হঠাৎই বাপি ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে ঘুসি দিয়ে আয়নাটা ভেংগে ফেললেন আর একটা ভাংগা আয়নার টুকরো হাতে নিলেন আর নিজের গলার কাছে নিলেন, কি হবে বুজতে পেরে আমি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম

–তুমি এটা করোনা বাপি তোমাকে আমার দিব্যি, তুমি যদি একটা আঁচড়ও নিজেকে দেয়ার চেষ্টা করো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে

—মামনি তোমার দিব্যি তুমি তুলে নাও,,,আমি আর বাচতে চাই না, আমাকে মরতে দাও আমাকে মরতে দাও(কেদে কেদে)

–বাপি তুমি সজ্ঞানে কিছু করনি আমি জানি,,,তুমি মরে গেলে আমার কি হবে বাপি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, তুমি মরে গেলে নিজেকে তোমার মৃত্যুর জন্যে দায়ী ভাবতে ভাবতে আমিও যে মরে যাব, এর থেকে ভালো তুমি আমায় মেরে ফেলো,,,আমিযে তোমার মৃত্যু স্বচোক্ষে দেখতে পারবো না

বাপি হাত থেকে কাচটা ফেলে দিলেন আর বিছানার পাশথেকে চাদর নিয়ে আমাকে ঢেকে দিলেন আর আমায় জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগলেন

—আমায় মাফ করে দাও মামনি,,,আমি তোমার অপরাধী আমায় মাফ করে দাও

–এক শর্তে মাফ করবো

—কি শর্ত বলো?আমি আমার জান দিয়ে হলেও আমার পাপের প্রাশ্চিত্ত করবো

–শর্ত হলো কখনো আত্বহত্যার চেষ্টা করবানা আর আর কখনো কোন দিন মদ খাবা না বা কোন নেশা করবা না

বাপি জবাবে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললেন, আর আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম

–জানো বাপি আমি না একটা কথা জেনেছি

—কি কথা?

–তুমি মাম্মিকে পাগলের মত ভালোবাসো,,,আমার জন্যও একটা পাগল খুজে দাও না

—হুম দিবো,,,আমার প্রিন্সেসের জন্যে একটা প্রিন্স আনবো(বলেই আবার কাদতে লাগল)

–কেদোনা বাপি প্লিজ

—আমি একটা জানোয়ার, পশু মৃত্যুর শাস্তিও আমার জন্যে কম হয়ে যাবে

–এসব কথা বলোনা বাপি প্লিজ

—(কাদতে কাদতেই)নিজের কলিজার টুকরার উপর নিজেই এত অত্যাচার করেছি. নিজের মেয়েকে নিজেই অসতী করেছি. সবার কাছ হতে আগলে রেখেছি যাতে কেউ ক্ষতি করতে না পারে আর নিজেই কিনা এত বড় ক্ষতি করলাম

–বাপি এসব বোলো না আমি তোমায় আমার দোষী ভাবিনি. নিজেকে আর দোষ দিও না তাহলে আমিও নিজেকে মাফ করতে পারব না( একটু উঠতে চাইলে ব্যাথার কারনে আহ বলে পরে গেলাম)

বাপি এটা দেখে আরও বেশি করে কাদতে লাগলেন তারপর আমায় কোলে নিয়ে বাথটাবে শুইয়ে দিলেন আর পানির টেম্পারেচার দেখে কুসুম গরম পানি ছাড়লেন, পানি লাগায় কাটা জায়গায় শিনশিন করে ব্যাথা করে উঠলো মুখ বুজে ব্যাথাটা সহ্য করলাম তারপর বাপি চলেগেলেন আর কিছুক্ষণ পর সাথে করে ওষুধের বোতলের মত কয়েকটা বোতল আনলেন আর পানিতে ঢাললেন আর ওগুলো সরিয়ে রাখলেন আর আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন.

ধীরে ধীরে ব্যাথা কমতে থাকে তারপর আবারও চলে গেলেন আর সাথে করে ওষুধ আর খাবার আনলেন আর আমাকে খাইয়ে দিলেন এই কাজ গুলো করার সময় বাপি নিজের কান্না থামাননি অনবরত কাদতে কাদতে কাজগুলো করছিলেন , আধ ঘন্টা পর বাপি আমার কাপড় আর টাওয়াল রেখে গেলেন আর বলে গেলেন শরীর টা ভালো লাগলে জামাটা পরে নিতে. কিছুক্ষণ থাকার পর দেখলাম শরীরের ব্যাথা প্রায় সেরে গেছে আর শরীরে শক্তিও পাচ্ছি তাই উঠে গিয়ে শরীর মুছে ফেলে জামা পরে নিলাম.

———-নির্ঝর রায়ের point of view————

আমি ডাঃ নির্ঝর রায় ___ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান, আমি নিজের প্রফেশন অনুযায়ী একজন সফল ডাক্তার। আমার পরিবারের সদস্য তিন জন ছিল আমি, আমার স্ত্রী তৃষ্ণা আর আমার মেয়ে তিশা আর সেটা ১৫ বছর আগের কথা. আমার স্ত্রী ব্রেইন টিউমার এ আক্রান্ত হওয়ার কারনে মারা যায়, কিন্তু আমি তার এই মৃত্যুটা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারিনি কারন আমি তাকে প্রচন্ডরকম ভালবাসতাম. আমার আর তৃষ্ণার বিয়েটা ছিল প্রেমের বিয়ে যদিও পারিবারিক ভাবে হয়েছে, ওর আর আমার প্রেমের সুত্রপাত হয়েছে কলেজ লাইফ এ। ও আর আমি একি ক্লাস এ পড়তাম,আমরা দুজন ক্লাসমেট ছিলাম. ওর সাথে যখন আমার প্রথম দেখা হয় সেদিনই আমি ওর প্রেমে পড়ি. ওর টানা টানা চোখ, লম্বা কোমর সমান ওয়েভি চুল, নাক, চিবুক আর ওর ঠোঁটের নিচের তিল আমাকে ওর দিকে প্রবল ভাবে আকর্ষিত করে তাই প্রথম দর্শনেই ওর প্রেমে পড়ে যাই, ক্লাসএ সবসময় ওর দিকেই আমার নজরপড়ে থাকতো কিন্তু সামনে গিয়ে কথা বলার সাহস হত না, ওর সামনে গেলেই আর কথা বলতে পারতাম না.

একদিন হঠাৎ নিজেই আমার কাছে আসলো

–একটা কথা বলার ছিল

—(আমি ভেবাচেকা খেয়ে) হ,,হ্যাঁ বলো

–আসলে আমাকে যদি এই লেকচারটা বুঝিয়ে দিতেন

আমি সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে থাকলাম,,,বোঝানো হয়ে গেলে বললো

–থ্যাংকস,,,আসলে আমি এটা বুঝছিলাম না তাই আর কি

—না না এতে থ্যাংকস বলার কিছু নেই, এখন থেকে যা বুঝবা না তা আমার কাছে বুঝে নিও

কথার উত্তরে মিষ্টি করে একটা হাসি দিলো, সেটা দেখে আমার বুকের মদ্ধে ধাক্কা লাগে আর মনের মদ্ধে শিহরণ বয়ে যায়, আর আস্তে আস্তে আমাদের কথা বলাটাও শুরু হয়, প্রথম সেমিস্টার পরিক্ষার পর কিছু দিন ছুটি থাকায় ওর সাথে দেখা হয়নি, আগে এই ছুটির জন্যে পাগল হয়ে থাকতাম কিন্তু এই বারের ছুটির জন্যে প্রিন্সিপাল কে মনে মনে গালি দিতে লাগ্লাম কেন এতদিন ছুটি দিল,এক একটা দিন আমার কাছে বছরের মত লাগতো ছুটির দিন শেষ হতেই শান্তির নিশ্বাস ফেললাম আর ক্লাসএর দিন ই রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলাম কলেজের উদ্দেশ্যে কখন আমার প্রিয়সি কে দেখব তা ভাবতে লাগ্লাম গিয়েই অপেক্ষা করতে লাগ্লাম তৃষ্ণার জন্যে.

Comments

Scroll To Top